Wednesday, December 30, 2015

জৈব যৌগের নামকরণ-৪

শিখনফল: IUPAC পদ্ধতিতে জৈব যৌগের নামকরণ করতে পারবে।


আগের পর্বের ধারাবাহিকতায় এই পর্বে আমরা জৈব যৌগে উপস্থিত কার্যকরী মূলক অনুসারে prefix suffix সমূহ বসিয়ে নামকরণ শিখব।


যৌগটির দীর্ঘতম শিকলে ৪টি কার্বন পরমানু এবং ১ নং অবস্থানে কার্বন-কার্বন দিবন্ধন অর্থাৎ অ্যালকিনের কার্যকরী মূলক রয়েছে। আর আমরা জানি, অ্যালকিনের জন্য কার্বন পরমাণুর সংখ্যা অনুসারে মূলশব্ধ (word root) এর পর পরপদ (suffix) হিসেবে ইন (-ene) বসে। তাই যৌগটির নাম বিউট-১-ইন।

লক্ষ্য করি, IUPAC নামকরণে অবস্থান সূচক একাধিক সংখ্যা কমা (,) এবং শব্ধ ও সংখ্যার মাঝে হাইফেন বসে।


এই যৌগটিতে দ্বিবন্ধন দুইবার আছে তাই ডাইইন।

অনুরুপভাবে ৩,৪,৫ ইত্যাদি বারের জন্য ট্রাই, টেট্রা, পেন্টা ইত্যাদি শব্ধ বসবে। একই নিয়ম যেকোন একাধিক কার্যকরী মূলকের জন্য প্রযোজ্য।

ইন-আইন যৌগের অবস্থান নির্ণয়।


এই যৌগটিতে একই সাথে দ্বিবন্ধন ও ত্রিবন্ধন রয়েছে। কিন্তু দুই ধরনের বন্ধনের মধ্য ত্রিবন্ধন (-আইন) ক্ষুদ্রতর অবস্থানে রয়েছে এবং যেদিক থেকে সংখ্যায়িত করলে দ্বিবন্ধন অথবা ত্রিবন্ধন যেটিকে আগে পাওয়া যাবে সেদিক থেকে সংখ্যায়িত করতে হবে।

কিন্তু যদি দ্বিবন্ধন ও ত্রিবন্ধন একই অবস্থানে থাকে তবে সেক্ষেত্রে দ্বিবন্ধন (-ইন) কে ক্ষুদ্রতম অবস্থানে রাখতে হবে। যেমন-


ইন ও আইন উভয়ই ১ নং অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু অগ্রাধিকার ক্রম** অনুসারে (**অগ্রাধিকার ক্রমের নিয়মের বিস্তারিত নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে) ইন কে ক্ষুদ্রতম অবস্থানে রেখে নামকরণ করা হয়েছে। 

এবার আরেকটি যৌগ লক্ষ্য করি।



এই যৌগটিতে একই দীর্ঘতম শাখায় একটি অ্যালকাইল মূলক এবং একটি কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধন রয়েছে। একই মূলশিকলে একাধিক কার্যকরী মূলক বা প্রতিস্থাপিত মূলক থাকলে নিম্নলিখিত অগ্রাধিকার ক্রম অনুসরণ করতে হবে।

একাধিক প্রতিস্থাপিত বা কার্যকরী মূলক বিশিষ্ট জৈবযৌগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ক্রম।(** চিহ্ন বিশিষ্টগুলো বেশী গুরুত্বপূর্ন)

-COOH (কার্বোক্সিলিক এসিড)**
-SO3H (সালফানিক এসিড
-COX (এসিড হ্যালাইড)
-CONH2 (অ্যামাইড)
-CN (সায়ানাইড)
- CHO (অ্যালডিহাইড)**
-CO- (কিটোন)**
-OH (অ্যালকোহল)**
-NH2  (অ্যামিন)
alkene (double bond)**
alkyne (triple bond)**
alkane
-OR (ইথার)
-X (হ্যালাইডস) (-F (ফ্লোরো)>-Cl ( ক্লোরো) > -Br ( ব্রোমো )> -I (আয়োডো )
-NO2 (নাইট্রো)
-R (অ্যালকাইল)

এবং এই ক্রম অনুসারে যেটি উপরে থাকবে সেটিকে মূল যৌগ বিবেচনা করে ন্যূনতম অবস্থানে রেখে নামকরণ করতে হবে।
এই নিয়ম অনুসারে যেহেতু দ্বিবন্ধনের অবস্থান অ্যালকাইল মূলকের উপরে তাই উপরের যৌগটির নাম হবে ৪-মিথাইলপেন্ট-২-ইন।

এইবার আমরা বিভিন্ন ধরনের জৈব যৌগের নামকরণ অনুশীলন করবো।

অনুশীলনের সুবিধার্থে নিচে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো। প্রত্যেকটির নামকরণ বোঝার চেষ্টা কর।
     
                   

(তিনটি অ্যালকোহল মূলক)

(প্রথমটিতে কিটোনের কার্যকরী মূলক, এবং দ্বিতীয়টিতে অ্যালডিহাইডের)

(এক কার্বন তাই মিথানোয়িক এসিড, তবে যৌগটি ফরমিক এসিড নামে বেশী পরিচিত)


(অগ্রাধিকার ক্রম অনুসরণ করে নামকরণ করা হয়েছে)


(অগ্রাধিকার ক্রমে অ্যালডিহাইড-এর কার্বন ১নং এ রেখে দীর্ঘতম শিকল নির্ণয় করা হয়েছে)


(কার্বোক্সিলিক এসিডের কার্বন সবসময় ১নং)



(দীর্ঘতম শিকল নির্ণয় ও হ্যালোজেনের নামকরণে ইংরেজি বর্নানুক্রম)



(অ্যামিন প্রতিস্থাপক সমূহকে সংখ্যার পরিবর্তে N,N দ্বার চিহ্নিত করতে হয়)


আগামী পর্বে আমরা চক্রিয় যৌগসমূহের নামকরণ শিখব।


Monday, December 28, 2015

জৈব যৌগের নামকরণ-৩

শিখনফল: IUPAC পদ্ধতিতে জৈব যৌগের নামকরন করতে পারবে।


আগের পর্বগুলোতে আমরা সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন তথা অ্যালকেনের নামকরণ শিখেছি। যেমন-


যৌগটির দীর্ঘতম শিকলে  ৫টি  C পরমাণু, ক্ষুদ্রতম দিক থেকে ২ নং অবস্থানে শাখা হিসেবে একটি মিথাইল মূলক, আর কার্বন-কার্বন একক বন্ধন এই বিষয়গুলি হিসেব করে আমারা এখন বলতে পারি যৌগটির নাম ২-মিথাইলপেন্টেন।

এখন এই নামের প্রতিটি অংশ লক্ষ্য করি।

  • এই সংখ্যাটি দীর্ঘতম শিকলে শাখা বা কার্যকরী মূলকের অবস্থান নির্দেশক সংখ্যা।
  • মিথাইল-এটি মূল হাইড্রোকার্বন শিকলে শাখায় যুক্ত অ্যালকাইল মূলকের নাম। এটিকে উপপদ (prefix) বলে।
  • পেন্ট-মূল হাইড্রোকার্বন শিকলে কার্বনের সংখ্যা। এটি শব্ধ মূল বা (word root)
  • এন-এটি যৌগের প্রকৃতি অনুযায়ী যুক্ত হওয়া পরপদ (suffix)

আগের পর্বের নিয়মগুলো অনুশীলন করে এবং নিচের ছকে দেওয়া যৌগের প্রকৃতি তথা কার্যকরী মূলক অনুযায়ী prefix suffix এর নাম বসিয়ে পরবর্তী পর্ব গুলোতে আমরা অন্যান্য জৈব যৌগের নামকরণ শিখব।

group name
structure
prefix
suffix
alkane 
-H3C-CH3-

ane (-এন)
alkene 

-ene    (-ইন)
alkyne 

           
-yne (-আইন
alcohol
R-OH 
hydroxy (হাইড্রোক্সি
-ol (-অল)
aldehyde
R-CHO
oxo- (formyl) অক্সো (-ফরমাইল)
-al (অ্যাল)
ketone
R-CO-R
oxo-              (অক্সো)  
-one (ওন)
carboxylic acid
R-COOH
carboxy-         কার্বোক্সি
-oic acid (-ওয়িক এসিড)
amine
R-N= (-NH2)
amino- (অ্যামিনো)
-amine (-অ্যামিন)
alkyl
R= -CH3, -CH2CH3, ইত্যাদি
alkyl- (অ্যালকাইল)

CH3-
methyl- (মিথাইল)

CH3CH2-
ethyl- (ইথাইল)



isopropyl-


tert-butyl or t-butyl

alkoxy
R-O-
alkoxy- (অ্যালকোক্সি)

halogen
F-
fluoro- (ফ্লুরো)

Cl-
chloro- (ক্লোরো

Br-
bromo- (ব্রোমো)

I-
iodo- (আয়োডো)

nitro
NO2-
nitro- (নাইট্রো)

vinyl
CH2=CH-
vinyl- (ভিনাইল)

allyl
CH2=CH-CH2-
allyl- (অ্যালাইল)

phenyl

phenyl- (ফিনাইল)



নামকরণ করার চেষ্টা কর:



Sunday, December 27, 2015

জৈব যৌগের নামকরণ-২

শিখনফল: IUPAC পদ্ধতিতে জৈব যৌগের নামকরণ করতে পারবে।

জৈব যৌগের নামকরণ-১


আগের পর্বে আমরা সরল শিকল অ্যালকেনের নামকরণ শিখেছি। এই পর্বে আমরা দেখব কিভাবে শাখাশিকল যুক্ত অ্যালকেনের নামকরণ করতে হয়। নিচের উদাহরণ লক্ষ্য করি-


শাখা শিকল যুক্ত অ্যালকেনের নামকরণের জন্য-
  •  মূল হাইড্রোকার্বন শিকল বা প্রধান শিকল নির্ণয় করতে হবে। যেভাবে হিসেব করলে শিকলে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক কার্বন পরমাণু পাওয়া যাবে সেটিই মূল শিকল
  •  মূল শিকলে শাখা শিকলটির অবস্থান নির্ণয়ের জন্য মূল শিকলটিকে এমনভাবে সংখ্যায়িত করতে হবে যেন শাখাশিকলটি ন্যূনতম অবস্থান লাভ করে। অর্থাৎ যেদিক থেকে সংখ্যায়িত করলে শাখা শিকলটি আগে পাওয়া যাবে সেদিক থেকে সংখ্যায়িত করতে হবে। নামকরণের শুরুতেই এই অবস্থান সূচক সংখ্যাটি লিখতে হবে।
  • শিকলে সংযুক্ত অ্যালকাইল মূলকের নাম লিখতে হবে। (অ্যালকেন (CnH2n+2) থেকে একটি হাইড্রোজেন সরালে যে মূলক (-CnH2n+1) পাওয়া যায় তাকে অ্যালকাইল মূলক বলে। যেমন-মিথেন থেকে মিথাইল, প্রোপেন থেকে প্রোপাইল ইত্যাদি)।
  • মূল শিকলে কার্বন পরমাণুর সংখ্যা অনুসারে হাইড্রোকার্বনের নামকরণ করতে হবে।


এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে উপরের যৌগটির নামকরণ করি-


দেখা যাচ্ছে চিত্রের মতকরে সংখ্যায়িত করলে কার্বন শিকলটি দীর্ঘতর (৬টি C পরমানু) হয় এবং ন্যূনতম অবস্থানে (৩ নং) প্রতিস্থাপিত মূলক বা শাখা শিকল (মিথাইল মূলক) পাওয়া যায়। তাই যৌগটির নাম ৩-মিথাইলহেক্সেন।

লক্ষ্য কর, শিকলের অবস্থান সূচক সংখ্য ও নামের আগে একটি হাইফেন (-) বসেছে। আর প্রতিস্থাপিত মূলক ও মূল হাইড্রোকার্বন শিকলের নামের আগে কোন স্পেস নেই। দুটি নাম একসাথে লিখতে হবে।

এবার আমরা নিচের যৌগদুটির নামকরণ করি-




  • দীর্ঘতম কার্বন শিকল নির্ণয় করি।
  • ন্যূনতম অবস্থানে শাখা রেখে মূল শিকল সংখ্যায়িত করি।
  • নামকরণ করি।

আগের উদাহরণ টি বুঝে থাকলে আমরা নিশ্চই এতক্ষণে বুঝে গেছি এই দুটি আসলে একই যৌগ। ২-মিথাইল পেন্টেন।

নামরকরণ করি-






উত্তর: যৌগদুটির নাম
৩-মিথাইলপেন্টেন
২-মিথাইল বিউটেন।

এইবার আরও একটি উদাহরণ লক্ষ্য করি-



এই যৌগের ২,৩ ও ৪ নং অবস্থানে একই প্রতিস্থাপিত মূলক রয়েছে। তাই একই প্রতিস্থাপিত মূলকের প্রতিটি অবস্থান নির্দেশক সংখ্যা পর পর কমা (,) দিয়ে লেখা হয়েছে এবং মূলকটি তিনবার আছে বলে ট্রাই শব্দটি বসেছে।

অনুরুপভাবে ২,৪,৫,৬,৭,৮ ইত্যাদি বারের একই প্রতিস্থাপিত মূলকের জন্য যথাক্রমে ডাই, টেট্রা, পেন্টা, হেক্সা, হেপ্টা, অক্টা ইত্যাদি শব্দ বসবে।

  • একই অবস্থানে একাধিকবার প্রতিস্থাপিত মূলক থাকলে প্রতিবারের জন্য অবস্থান নির্দেশক সংখ্যাটি লিখতে হবে। যেমন-


  • একই মূল শিকলে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিস্থাপিত মূলক থাকলে তাদের নাম ইংরেজী বর্ণমালার ক্রম অনুসারে লিখতে হবে। যেমন-


প্রথমে ethyl -এর e, তারপর methyl -এর m ও সবশেষে propyl -এর pলক্ষ্য কর যদিও মিথাইল এর আগে ট্রাই অর্থাৎ 't' শব্দটি ইংরেজী বর্ণানুক্রমানুসারে 'p' -এর পরে কিন্তু মনে রাখতে এটি মূলকের নাম নয় এটি মূলকের সংখ্যা। তাই এটি হিসেব হবে না। শুধুমাত্র মূলকের নামের বর্ণানুক্রম অনুসরণ করতে হবে। 
  • যদি দুই দিক থেকে একই অবস্থানে প্রতিস্থাপিত মূলক থাকে তবে দ্বিতীয় প্রতিস্থাপিত মূলকের ন্যুনতম অবস্থান হিসাব করতে হবে-

ডান ও বাম দুই দিক থেকেই এই যৌগটির ২ নং এ প্রথম প্রতিস্থাপক মূলক পাওয়া যায়। কিন্তু ডান দিক থেকে ৩ নং এ এবং বাম দিক থেকে ৫ নং এ দ্বিতীয় প্রতিস্থাপক মূলক পাওয়া যায়। তাই যৌগটির প্রধান শিকল ডান দিক থেকে সংখ্যায়িত করে নামকরণ করা হয়েছে।

  • শাখা শিকলের অবস্থান নির্দেশক সংখ্যার যোগফল যে দিক থেকে ক্ষুদ্রতর হবে সে দিক থেকে প্রধান শিকল সংখ্যায়িত করতে হবে। যেমন-

দুই দিক থেকে একই ২ নং অবস্থানে প্রতিস্থাপিত মূলক রয়েছে এবং দ্বিতীয় কোন প্রতিস্থাপক নেই। ডান দিক থেকে সংখ্যায়িত করলে অবস্থান নির্দেশক সংখ্যার যোগফল হয় (২+৪+৪=১০)। তাই বাম দিক থেকে (২+২+৪=৮) অর্থাৎ ক্ষুদ্রতর দিক থেকে সংখ্যায়িত করে নামকরণ করা হয়েছে।

  • যদি দুই বা ততোধিক ভিন্ন প্রকৃতির মূলক একই অবস্থানে থাকে তবে ইংরেজী বর্ণানুক্রমানুসারে যে মূলকটি আগে আসে তার অবস্থান টি আগে হিসেব করতে হবে।



ইথাইল ও মিথাইল উভয়ই ৩ নং অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু বর্ণানুক্রমানুসারে ইথাইলের অবস্থান ৩ হয়েছে।

  • সমসংখ্যক কার্বন পরমানুর দুটি আলাদা প্রধান শিকল সম্ভব হলে অধিক সংখ্যক বা মূলকযুক্ত কার্বন শিকলকে প্রধান শিকল হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
  • শাখাশিকলে দুই এর অধিক কার্বন পরমাণুর জটিল প্রতিস্থাপক থাকলে শাখাটিকে পৃথকভাবে সংখ্যায়িত করে শাখাটির অবস্থান সূচক সংখ্যা লিখে নাম বন্ধনীর মধ্যে লিখতে হবে। যেমন-





এই নিয়মগুলো বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে আয়ত্ত্ব করতে পারলে পরবর্তীতে অন্য যেকোন ধরনের জৈব যৌগের নামকরণ খুব সহজেই করা যায়।


নামকরণ কর-



জৈব যৌগের নামকরণ-৩