Monday, June 27, 2016

অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন-অ্যালকাইন




শিখনফল-
  • অ্যালকাইন কাকে বলে বলতে পারবে।
  • অ্যালকাইনের ধর্ম ও বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • অ্যালকাইনের শিল্পোৎপাদন বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • অ্যালকাইনের পরীক্ষাগার প্রস্তুতি লিখতে পারবে।
  • অ্যালকাইনের রাসায়নিক সক্রিয়তা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • অ্যালকাইনের অম্লধর্মীতা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • অ্যালকাইনের সাথে বিভিন্ন যৌগের সংযোজন বিক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • অ্যালকাইনের ওজোনীকরণ বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • বিক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যালকাইনে ত্রিবন্ধনের অবস্থান নির্ণয় করতে পারবে।
  • অ্যালকাইনের জারণ বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • অ্যালকাইন শনাক্তকরণ করতে পারবে।
  • অ্যালকাইন-১ ও অ্যালকাইন-২ এর মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে।
  • ইথেন, ইথিন ও ইথাইনের মিশ্রণ পৃথক করার বিক্রিয়া লিখতে পারবে। 

অ্যালকেন-
   
     যে সব হাইড্রোকার্বনের মুক্ত কার্বন শিকলে একটি মাত্র কার্বন-কার্বন ত্রিবন্ধন থাকে তাদেরকে অ্যালকাইন বলে। অ্যালকাইনের সাধারণ সংকেত CnH2n-2যেমন: ইথাইন ($C_2H_2$),  ২-বিউটাইন ($H_3C-C\equiv C-CH_3$) ইত্যাদি।

অ্যালকাইনের প্রস্তুতি-

শিল্পক্ষেত্রে-

     ডাইহ্যালো অ্যালকেন থেকেঃ ভিসিন্যাল ও জেমিন্যাল ডাইহ্যালো অ্যালকেনকে অ্যালকোহলে দ্রবীভূত কস্টিক পটাশের সাথে উত্তপ্ত করলে ডাইহ্যালো অ্যালকেন থেকে দুই অণু HX অপসারিত হয়ে অ্যালকাইন উৎপন্ন হয়। যেমন-

     ১. ভিসিন্যাল ডাইহ্যালাইড থেকেঃ



               

কিভাবে 1, 2 ডাইব্রোমো প্রোপেন থেকে প্রোপাইন প্রস্তুত করবে?

     ২. জেমিন্যাল ডাইহ্যালাইড থেকেঃ


          

2, 2 -ডাইব্রোমোপ্রোপেন থেকে প্রোপাইন প্রস্তুতিঃ





পরীক্ষাগারে-

     সাধারণ তাপমাত্রায় ক্যালসিয়াম কার্বাইড ($CaC_2$) এর উপর পানি যোগ করলে ক্যালসিয়াম কার্বাইড আর্দ্র বিশ্লেষিত হয়ে ইথাইন গ্যাস ও ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড উৎপন্ন হয়।


$$CaC_2 + 2H_2O \longrightarrow H-C\equiv C-H + Ca(OH)_2$$


অ্যালকানের বিক্রিয়া-

     অ্যালকাইনে একটি σ ও দুটি π বন্ধন আছে। তাই অ্যালকিনের π বন্ধনের মত অ্যালকাইন ও অনুরূপ সংযোজন, জারন, ওজোনীকরণ, পলিমারকরণ ইত্যাদি বিক্রিয়া দেয়। তবে সক্রিয়তার দিক থেকে অ্যালকাইনসমূহ অ্যালকিন থেকে কম সক্রিয়।

অ্যালকাইনের সক্রিয়তা-

     অ্যালকিন পরমাণুর দ্বিবন্ধনে কার্বন পরমাণু দুটির প্রত্যেকটি sp2 -সংকরণ দ্বারা তিনটি সংকর অরবিটাল তৈরী করে। এসব সংকর অরবিটালে 33.3% s-চরিত্র ও 66.7% p-চরিত্র থাকে। অপরদিকে অ্যালকাইন পরমাণুর ত্রিবন্ধনে কার্বন পরমাণু দুটির প্রত্যেকটি sp -সংকরণ দ্বারা দুটি সংকর অরবিটাল তৈরী করে। এসব সংকর অরবিটালে 50% s -চরিত্র এবং 50% p -চরিত্র থাকে। অ্যালকিনের ত্রিবন্ধনে s -চরিত্র বেশি হওয়ায় কার্বন পরমাণুর দুটির নিউক্লিয়াসের σ ইলেকট্রণ মেঘ কাছাকা্ছি সরে আসে ফলে π ইলেকট্রণ মেঘের ঘনত্ব ও বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ অ্যালকিনের দ্বিবন্ধনের π-বন্ধনের চেয়ে অ্যালকাইনের ত্রিবন্ধনের π বন্ধন বেশি শক্তিশালী হয়। তাই রাসায়নিক ভাবে অ্যালকাইন অ্যালকিনের চেয়ে কম সক্রিয় হয়।


ইথাইন ইথিনের তুলনায় অধিক অম্লধর্মী-

     
     ইথিন পরমাণুর দ্বিবন্ধনে কার্বন পরমাণু দুটির প্রত্যেকটি sp2 -সংকরণ দ্বারা তিনটি সংকর অরবিটাল তৈরী করে। এসব সংকর অরবিটালে 33.3% s-চরিত্র ও 66.7% p-চরিত্র থাকে। অপরদিকে ইথাইন পরমাণুর ত্রিবন্ধনে কার্বন পরমাণু দুটির প্রত্যেকটি sp -সংকরণ দ্বারা দুটি সংকর অরবিটাল তৈরী করে। এসব সংকর অরবিটালে 50% s -চরিত্র এবং 50% p -চরিত্র থাকে। অর্থাৎ ইথিন ও ইথাইনের $-C-H$ বন্ধনে যথাক্রমে s- চরিত্র বৃদ্ধি পায় ও p- চরিত্র হ্রাস পায়। ফলে $-C-H$ বন্ধনের ইলেকট্রণ মেঘ ক্রমে কার্বন পরমাণুর দিকে বেশি আকৃষ্ট হয় এবং প্রোটন দান ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ইথাইন ইথিনের তুলনায় অধিক অম্লধর্মী।

     অ্যালকাইন -১($-C\equiv C-H$) এর ১ নং কার্বনে শুধুমাত্র  হাইড্রোজেন (H) যুক্ত থাকে বলে এরা মৃদু অম্লধর্ম প্রকাশ করে। এর কারণ হচ্ছে ত্রিবন্ধনের sp সংকরণে s- চরিত্র বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে $-C-H$ বন্ধনের ইলেকট্রণ মেঘ ক্রমে কার্বন পরমাণুর দিকে সরে আসে এবং বন্ধনটি দূর্বল হয়ে প্রোটন দান ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ইথাইন মৃদু অম্ল ধর্ম প্রকাশ করে এবং নিম্নোক্ত বিক্রিয়া দেয়।

     ১। Na -এর সাথে: ইথাইন Na -এর সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম অ্যাসিটিলাইড ও $H_2$ গ্যাস উৎপন্ন করে 
$$H-C\equiv C-H + 2Na \xrightarrow [] {liquid    NH_3}Na.C\equiv C.Na(s)\downarrow + H_2 (g)$$
$$R-C\equiv C-H + 2Na \xrightarrow [] {liquid NH_3} 2R-Na.C\equiv C.Na(s)\downarrow + H_2$$


     ২। অ্যামোনিয়া যুক্ত সিলভার নাইট্রেটের সাথে: অ্যামোনিয়া যুক্ত সিলভার নাইট্রেটের সাথে অ্যালকাইন-১ বিক্রিয়া করে সিলভার অ্যালকানাইড এর সাদা অধঃক্ষেপ উৎপন্ন করে।

$$R-C\equiv C-H + Ag(NH_3)_2NO_3(aq) \longrightarrow R.C\equiv C.Ag(s)\downarrow +  NH_4NO_3 + NH_3$$
$$H-C\equiv C-H + Ag(NH_3)_2NO_3(aq) \longrightarrow Ag.C\equiv C.Ag(s)\downarrow +  NH_4NO_3 + NH_3$$

     ৩। অ্যামোনিয়া যুক্ত কিউপ্রাস ক্লোরাইড এর সাথে: অ্যামোনিয়া যু্ক্ত কিউপ্রাস ক্লোরাইডের সাথে অ্যালকাইন-১ বিক্রিয়া করে কপার অ্যালকানাইড লাল অধঃক্ষেপ উৎপন্ন করে।

$$R-C\equiv C-H + Cu(NH_3)_2Cl \longrightarrow R.C\equiv C.Cu(s)\downarrow +  NH_4Cl + NH_3$$

$$H-C\equiv C-H + Cu(NH_3)_2Cl \longrightarrow Cu.C\equiv C.Cu(s)\downarrow +  NH_4Cl + NH_3$$

অ্যালকাইনের সংযোজন বিক্রিয়া-

H2 সংযোজন: Pt, Pd বা Ni প্রভাবকের উপস্থিতিতে অ্যালকাইনের সঙ্গে 1500-1800C তাপমাত্রায় হাইড্রোজেন যুক্ত হয়ে প্রথমে অ্যালকিন ও শেষে অ্যালকেন উৎপন্ন হয়।
$$CH_3-C\equiv CH + H_2 \xrightarrow [180^0C] {Ni} CH_3-CH=CH_2 + H_2 \xrightarrow [180^0C] {Ni} CH_3-CH_2-CH_3$$

ইথাইন থেকে ইথিন উৎপাদন- 

     কক্ষ তাপমাত্রায় Pd BaSO4 এর উপস্থিতিতে ইথাইন ও H2 -এর বিক্রিয়ায় ইথিন উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে BaSO4 প্রভাবক বিষরূপে Pd -এর প্রভাবন ক্ষমতা হ্রাস করে তাই উৎপন্ন ইথাইন H2 -এর সাথে বিক্রিয়া করে ইথিনে পরিণত হতে পারে না।
$$CH_2\equiv CH_2 + H_2 \xrightarrow [BaSO_4] {Pd} H_2C=CH_2$$

HX সংযোজন: অ্যালকাইনের সঙ্গে HX উত্তপ্ত অবস্থায় সংযোজিত হয়ে প্রথমে অপ্রতিসম মনো হ্যালোজেন জাতক এবং পরে মার্কনিকভ নিয়ম অনুসারে gem ডাই -হ্যালাইড উৎপন্ন করে।
$$R-C\equiv C-R + HX \xrightarrow R-CH=CRX \overset{HX}{\longrightarrow} R-CH_2-CRX_2$$

     যেমন: 2000-2500C তাপমাত্রায় HgCl­2 এর উপস্থিতিতে ইথাইন শুষ্ক HCl এর সাথে বিক্রিয়া করে প্রথমে ভিনাইল ক্লোরাইড উৎপন্ন করে পরে ভিনাইল ক্লোরাইড অতিরিক্ত HCl এর সাথে বিক্রিয়া করে ১, ১-ডাইক্লোরোইথেন উৎপন্ন করে।
$$CH\equiv CH + HCl (g) \xrightarrow [250^0C] {HgCl_2} CH_2=CHCl$$ 
$$CH_2=CHCl + HCl (g) \longrightarrow CH_3-CHCl_2$$



X2 সংযোজন: সাধারণ তাপমাত্রায় হ্যালোজেন অ্যালকাইনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে প্রথমে ডাই-হ্যালাইড ও পরে টেট্রাহ্যালাইড উৎপন্ন করে।


যেমন: ইথাইনের সাথে $Br_2$ এর বিক্রিয়ায় প্রথমে ১, ২-ডাইব্রোমো ইথিন এবং পরে ১,১,২,২- টেট্রাব্রোমো ইথেন উৎপন্ন হয়।


এ বিক্রিয়ায় $Br_2$  -এর লাল বর্ণ দুরীভূত হয় বলে এ বিক্রিয়ার সাহায্যে অ্যালকাইনের অসম্পৃক্ততা বা π -বন্ধনের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়।

HOX সংযোজন:  হাইপোহ্যালাস এসিড অ্যালকিনের সাথে দুধাপে বিক্রিয়া করে প্রথম ধাপে enol এবং দ্বিতীয় ধাপে ডাইহ্যালো কিটোন উৎপন্ন করে।


যেমন: ইথাইন হাইপো ক্লোরাস এসিড (HOCl) -এর সাথে বিক্রিয়া করে ডাইক্লোরো অ্যাসিটালডিহাইড উৎপন্ন করে।


H2O সংযোজন: লঘু $H_2SO_4$-এ দ্রবীভূত 2% মারকিউরিক সারফেটের উপস্থিতিতে 600-750C তাপমাত্রায় পানির সঙ্গে অ্যালকাইন যুক্ত হয়ে কার্বানাইল যৌগ গঠন করে।


যেমন: লঘু $H_2SO_4$-এ দ্রবীভূত 2% মারকিউরিক সারফেটের উপস্থিতিতে 600-750C তাপমাত্রায় পানির সঙ্গে ইথাইন যুক্ত হয়ে কার্বানাইল যৌগ গঠন করে।


উৎপন্ন ইথান্যালকে ম্যাঙ্গানাস অ্যাসিটেট প্রভাবকের উপস্থিতিতে অক্সিজেন দ্বারা জারিত করলে অ্যাসিটিক এসিড উৎপন্ন হয়।
$$2CH_3CHO + O_2 \xrightarrow [\Delta] {(CH_3COOH)_2, Mn} 2CH_3COOH$$


**প্রোপাইন থেকে প্রোপানোন প্রস্তুত কর।



-OH -COOH সংযোজন: উচ্চ তাপমাত্রায় ক্ষার (KOH) দ্রবণের উপস্থিতিতে ইথাইন অ্যালকোহলের সাথে যুক্ত হয়ে ভিনাইল ইথার গঠন করে।


অনুরূপভাবে মারকিউরিক সালফেটের উপস্থিতিতে 800C তাপমাত্রায় ইথাইন কার্বোক্সিলিক এসিডের সঙ্গে সংযোজন বিক্রিয়ায় ভিনাইল এস্টার গঠন করে।


অ্যালকাইনের ওজোনীকরণ বিক্রিয়া-

ক্লোরোফরম (CHCl3) বা কার্বন টেট্রাক্লোরাইড (CCl4) এ দ্রবীভূত অ্যালকাইনের দ্রবণে ওজোন গ্যাস চালনা করলে অ্যালকাইন ওজোনাইড নামক যুত যৌগ উৎপন্ন হয়উৎপন্ন ওজোনাইড যৌগকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করা হলে ডাইকার্বানাইল যৌগ H2O2 উৎপন্ন হয়।



বিক্রিয়ায় উৎপন্ন H2O2 ডাইকার্বনাইল যৌগকে জারিত করে এবং ত্রিবন্ধনের দুই কার্বনের মাঝখানের বন্ধন ভেঙ্গে গিয়ে কার্বক্সিলিক এসিড উৎপন্ন করে।

এক্ষেত্রে বিউটাইন-১ এর বেলায় প্রোপানোয়িক এসিড ও মিথানোয়িক এসিডের মিশ্রণ পাওয়া যায় (অপ্রতিসম অ্যালকাইন-এ বা প্রান্তীয় কার্বনে ত্রিবন্ধন থাকলে দুটি জৈব এসিডের মিশ্রন পাওয়া যাবে।)


এবং বিউটাইন-২ এর বেলায় ২ অনু ইথানোয়িক এসিড পাওয়া যায়। (প্রতিসম অ্যালকাইন বা অপ্রান্তীয় অ্যালকাইন (ত্রিবন্ধনের দুপাশে সমান সংখ্যক কার্বন থাকলে)-এ ২ অণু জৈব এসিড পাওয়া যাবে)


তাই এ বিক্রিয়ার সাহায্যে অ্যালকাইনে ত্রিবন্ধনের অবস্থান নির্ণয় করা যায়। যেমন-




(এই মিশ্রণে Zn গুঁড়া যোগ করলে অক্সালডিহাইড বা গ্লাইঅক্সাল $H_2O_2$ দ্বারা জারিত হয়ে ফরমিক এসিডে পরিণত হতে পারে না)

$$Zn + H_2O_2 \longrightarrow ZnO + H_2O$$


অ্যালকাইনের জারন বিক্রিয়া-

অ্যালকাইনকে ক্ষারীয় KMnO4 দ্বারা উচ্চ তাপমাত্রায় জারিত করলে ত্রিবন্ধনের জারণ ও ভাঙনের ফলে বিভিন্ন কার্বোক্সিলিক এসিড উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন এসিড শনাক্তকরণের মাধ্যমে ত্রিবন্ধনের অবস্থান নিশ্চিত করা যায়।

যেমন-অ্যালকাইন-১ কে ক্ষারীয় KMnO4 দ্বার জারিত করলে জৈব এসিড ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়।


অ্যালকাইন-২ কে ক্ষারীয় KMnO4 দ্বার জারিত করলে জৈব এসিড ও অ্যাসিটিক এসিড উৎপন্ন হয়।


অ্যালকাইন-৩ কে ক্ষারীয় KMnO4 দ্বার জারিত করলে জৈব এসিড ও প্রোপিয়নিক এসিড উৎপন্ন হয়।



ইথাইন কে ক্ষারীয় KMnO4 দ্বারা জারিত করলে অক্সালিক এসিড উৎপন্ন হয়।



অ্যালকাইনের অসম্পৃক্ততা (ত্রিবন্ধনের উপস্থিতি) নির্ণয়-

ব্রোমিন পানি পরীক্ষা (Br2 সংযোজন)
অ্যালকাইনের সাথে $Br_2$ এর সংযোজন বিক্রিয়ায় প্রথমে ডাই-হ্যালাইড ও পরে টেট্রা হ্যালাইড উৎপন্ন হয়। যেমন: : ইথাইনের সাথে $Br_2$ এর বিক্রিয়ায় প্রথমে ১, ২-ডাইব্রোমো ইথিন এবং পরে ১,১,২,২- টেট্রাব্রোমো ইথেন উৎপন্ন হয়।


একইভাবে অ্যালকিনের সাথে ও Br2 এর সংযোজন বিক্রিয়ায় সন্নিহিত ডাই-হ্যালাইড উৎপন্ন হয়। যেমন: ইথিন (CH2=CH2) Br2 এর বিক্রিয়ায় ১,২-ডাইব্রোমো ইথেন উৎপন্ন হয়


অ্যালকেন এ বিক্রিয়া দেয় না। এ বিক্রিয়ায় ব্রোমিনের লাল বর্ণের জলীয় দ্রবন দূরীভুত হয় বলে এ বিক্রিয়ার সাহায্যে জৈব যৌগে ত্রিবন্ধন বা দ্বিবন্ধনের উপস্থিতি  নির্ণয় করা বা অসম্পৃক্ততার পরীক্ষা করা যায়।

জারণঃ

অ্যালকাইন-১ কে ক্ষারীয় KMnO4 দ্বার জারিত করলে জৈব এসিড ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়।


অ্যালকিন ও লঘু ক্ষারীয় KMnO4 এর বিক্রিয়ায় সন্নিহিত ডাই-অল উৎপন্ন হয়। যেমন: যেমন: ইথিন (CH2=CH2)  ক্ষারীয় KMnO4 এর বিক্রিয়ায় ইথেন ১,২-ডাইঅল বা ইথিলিন গ্লাইকল উৎপন্ন হয়।


অ্যালকেন এ বিক্রিয়া দেয় না। এ বিক্রিয়ায় KMnO4 এর গোলাপী বর্ণ দূরীভুত হয় বলে এ বিক্রিয়ার সাহায্যে জৈব যৌগে ত্রিবন্ধন বা দ্বিবন্ধনের উপস্থিতি  নির্ণয় করা বা অসম্পৃক্ততার পরীক্ষা করা যায়।

অ্যালকাইন-১ ও অ্যালকাইন-২ এবং অ্যালকাইন-১ ও অ্যালকিন-১ এর পার্থক্য নির্ণয়-

অ্যালকাইন-১ তার অম্লধর্মীতার জন্য নিম্নোক্ত বিক্রিয়া দেয়-

 ১। Na -এর সাথে: ইথাইন Na -এর সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম অ্যাসিটিলাইড ও $H_2$ গ্যাস উৎপন্ন করে।
$$H-C\equiv C-H + 2Na \xrightarrow [] {liquid    NH_3}Na.C\equiv C.Na(s)\downarrow + H_2 (g)$$
$$R-C\equiv C-H + 2Na \xrightarrow [] {liquid NH_3} 2R-Na.C\equiv C.Na(s)\downarrow + H_2$$


     ২। অ্যামোনিয়া যুক্ত সিলভার নাইট্রেটের সাথে: অ্যামোনিয়া যুক্ত সিলভার নাইট্রেটের সাথে অ্যালকাইন-১ বিক্রিয়া করে সিলভার অ্যালকানাইড এর সাদা অধঃক্ষেপ উৎপন্ন করে।
$$R-C\equiv C-H + Ag(NH_3)_2NO_3(aq) \longrightarrow R.C\equiv C.Ag(s)\downarrow +  NH_4NO_3 + NH_3$$
$$H-C\equiv C-H + Ag(NH_3)_2NO_3(aq) \longrightarrow Ag.C\equiv C.Ag(s)\downarrow +  NH_4NO_3 + NH_3$$

     ৩। অ্যামোনিয়া যুক্ত কিউপ্রাস ক্লোরাইড এর সাথে: অ্যামোনিয়া যু্ক্ত কিউপ্রাস ক্লোরাইডের সাথে অ্যালকাইন-১ বিক্রিয়া করে কপার অ্যালকানাইড লাল অধঃক্ষেপ উৎপন্ন করে।
$$R-C\equiv C-H + Cu(NH_3)_2Cl \longrightarrow R.C\equiv C.Cu(s)\downarrow +  NH_4Cl + NH_3$$

$$H-C\equiv C-H + Cu(NH_3)_2Cl \longrightarrow Cu.C\equiv C.Cu(s)\downarrow +  NH_4Cl + NH_3$$

অ্যালকাইন-২ ও অ্যালকিন-১ এসব বিক্রিয়া দেয় না

ইথেন, ইথিন ও ইথাইন গ্যাসের মিশ্রণ পৃথকীকরণ-
ইথেন, ইথিন ও ইথাইন গ্যাসের মিশ্রণে অ্যামোনিয়া যু্ক্ত কিউপ্রাস ক্লোরাইডের দ্রবন চালিত করলে লাল বর্ণের অধঃক্ষেপ হিসেবে ইথাইন শোষিত হয়। 
$$H-C\equiv C-H + Cu(NH_3)_2Cl \longrightarrow Cu.C\equiv C.Cu(s)\downarrow +  NH_4Cl + NH_3$$
এই অধঃক্ষেপে HCl চালনা করে ইথাইন সংগ্রহ করা হয়।

$$Cu.C\equiv C.Cu + 2HCl \xrightarrow H-C\equiv C-H + 2CuCl$$


এরপর ইথেন ও ইথিনের মিশ্রণে গাঢ় $H_2SO_4$ চালনা করলে ইথিন গাঢ়  $H_2SO_4$ এ শোষিত হয়ে  ইথাইল হাইড্রোজেন সালফেটে পরিণত হয় এবং ইথেন গ্যাস বুদবুদ আকার বের হয়। গ্যসটি পানি অপসারণ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা হয়। $$CH_2=CH_2 + H_2SO_4 \xrightarrow [] {25^0C} CH_3-CH_2-O-SO_3H$$ এবং সব শেষে উৎপন্ন ইথাইল হাইড্রোজেন সালফেটকে $160^0C$ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হলে ইথিন পাওয়া যায়। $$CH_3-CH_2-O-SO_3H \xrightarrow [] {160^0C} CH_2=CH_2 + H_2SO_4$$

Tuesday, April 5, 2016

অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন-অ্যালকিন

শিখনফল-

  • অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন কাকে বলে বলতে পারবে।
  • অ্যালকিন কাকে বলে বলতে পারবে।
  • অ্যালকিনের পরীক্ষাগার প্রস্তুতি লিখতে পারবে।
  • অ্যালকিনের শিল্পোৎপাদন বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • অ্যালকিনের অন্যান্য প্রস্তুতির বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • বিভিন্ন বিকারকের সাথে অ্যালকিনের সংযোজন বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • বিভিন্ন বিকারকের সাথে অ্যালকিনের সংযোজন বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • সংযোজন বিক্রিয়ায় মারকনিকভ নিয়ম ব্যাখ্যা ও প্রধান উৎপাদ নির্ণয় করতে পারবে।
  • সংযোজন বিক্রিয়ায় বিপরীত মারকনিকভ নিয়ম ব্যাখ্যা ও প্রধান উৎপাদ নির্ণয় করতে পারবে।
  • অ্যালকিনের ওজোনীকরণ ও জারন বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • অ্যালকিনে দ্বিবন্ধনের উপস্থিতি নির্ণয় তথা অসম্পৃক্ততার পরীক্ষার বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • অ্যালকিনে দ্বিবন্ধনের অবস্থান নির্ণয়ের বিক্রিয়া লিখতে পারবে।


আগের পর্বে-


-এর প্রস্তুতি, ধর্ম বিক্রিয়া ইত্যাদি শিখেছি।

আমরা আগেই পড়েছি হাইড্রোকার্বনের মুক্ত কার্বন শিকলে কমপক্ষে একটি কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধন অথবা ত্রিবন্ধন থাকলে তাদেরকে অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন বলে।

আর অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন দু শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। (ক) অ্যালকিন ও (খ) অ্যালকাইন।

কার্বন শিকলে কমপক্ষে একটি কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধন থাকলে তাদেরকে অ্যালকিন এবং ত্রিবন্ধন থাকলে তাদের অ্যালকাইন বলে।

তাহলে, যে সব হাইড্রোকার্বনের মুক্ত কার্বন শিকলে একটি মাত্র কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধন থাকে তাদেরকে অ্যালকিন বলে। অ্যালকিনের সাধারণ সংকেত CnH2nযেমন: ইথিন (C2H4), ২-বিউটিন (CH3-CH=CH-CH3) ইত্যাদি।

অ্যালকিনের প্রস্তুতি:

পরীক্ষাগারে-

ইথানল ও দ্বিগুন পরিমান গাঢ় H2SO4 এর মিশ্রণকে 160-1700c তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হলে প্রথমে 1000c তাপমাত্রায় ইথাইল হাইড্রোজেন সালফেট ও পানি এবং পরে 160-1700c তাপমাত্রায় ইথাইল হাইড্রোজেন সালফেট বিযোজিত হয়ে ইথিন গ্যাস ও H2SO4 উৎপন্ন করে। এ বিক্রিয়ায় গাঢ় H2SO4 নিরুদক হিসেবে ক্রিয়া করে।


শিল্পক্ষেত্রে-


প্রায় 350-4000c তাপমাত্রায় উত্তপ্ত অ্যালুমিনা (Al2O3) বা থোরিয়া (ThO2) পাউডারের উপর দিয়ে অ্যালকোহলের বাষ্পকে চালনা করলে অ্যালকোহল থেকে এক অনু অপসারিত হয়ে অ্যালকিন উৎপন্ন করা হয়।



এছাড়া, উত্তপ্ত ক্রোমিয়াম অক্সাইডের উপর দিয়ে পেট্রোল বাষ্প (অ্যালকেন) চালনা করলে অ্যালিকন উৎপন্ন হয়।


অ্যালকিনের আরও কিছু প্রস্তুতি-


ক. অ্যালকোহলের নিরুদন: বিভিন্ন নিরুদক (গাঢ় H2SO4 , Al2O3, H3PO4  প্রভৃতি) দ্বারা অ্যালকোহলকে নিরুদিত করলে অ্যালকিন পাওয়া যায়


অধিকতর বিশুদ্ধ ইথিন প্রস্তুতির জন্য গাঢ় H2SO4 এর পরিবর্তে গাঢ় H3PO4 ব্যবহার করা হয়-


খ. অ্যালকাইন থেকে: Pd এবং BaSO4 এর উপস্থিতিতে H2 দ্বারা ইথাইন কে বিজারিত করলে ইথিন উৎপন্ন হয়।

(উৎপন্ন ইথিন যাতে পুনরায় বিজারিত হয়ে ইথেনে পরিণত হতে না পারে তাই ইথানের বিজারণ নিয়ন্ত্রন করার জন্য BaSO4 যুক্ত Pd প্রভাবক ব্যবহার করা হয়।)

গ. অ্যালকাইল হ্যালাইড থেকে হাইড্রোজেন হ্যালাইড অপসারণ: অ্যালকাইল হ্যালাইডকে অ্যালকোহলীয় কস্টিক সোডা (NaOH) বা কস্টিক পটাশ (KOH) দ্বারা উত্তপ্ত করা হলে যৌগ থেকে HX এর অপসারণ ঘটে এবং অ্যালকিন উৎপন্ন হয়।

ঘ. সন্নিহিত ডাই-হ্যালাইডের হ্যালোজেন অপসারণ: সন্নিহিত ডাই-হ্যালাইডকে জিংক চূর্ণসহ উত্তপ্ত করা হলে যৌগ থেকে হ্যালোজেন অপসারিত হয়ে অ্যালকিন উৎপন্ন হয়।


অ্যালকিনের বিক্রিয়া-

অ্যালকিনে অস্থায়ী দ্বিবন্ধন থাকায় এরা অত্যন্ত সক্রিয়। অ্যালকিনের বিক্রিয়া সমূহ দ্বিবন্ধনে ঘটে থাকে। এরা সংযোজন, জারন, ওজোনীকরণ, পলিমারকরণ ইত্যাদি বিক্রিয়া দেয়।


অ্যালকিনের সংযোজন বিক্রিয়া-
হাইড্রোজেন (H2), হ্যালোজেন (X2), হাইড্রোজেন হ্যালাইড (HX), হাইপো হ্যালাস এসিড (HOX), সালফিউরিক এসিড (H2SO4), ওজোন (O3) প্রভৃতি বিকারক অ্যালকিনের কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধনের সঙ্গে যুত বিক্রিয়ার মাধ্যমে যুত যৌগ উৎপন্ন করে। যেমন:

অ্যালকিনের সংযোজন বিক্রিয়া মূলত ইলেকট্রোফিলিক সংযোজন বিক্রিয়া। অ্যালকিনের কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধনে সঞ্চারণশীল পাই (π) ইলেকট্রনের মেঘ সহজেই ধনাত্মক ইলেকট্রন আকর্ষী বিকারক তথা ইলেকট্রোফাইল (E+) দ্বারা আক্রান্ত হয়। ইলেকট্রন আকর্ষী বিকারকের আকর্ষনে π-ইলেকট্রন মেঘমালা আক্রান্ত কার্বন পরমাণুতে স্থানান্তরিত হয়। এবং এই ইলেকট্রন দ্বারা কার্বন পরমাণুটির সঙ্গে ইলেকট্রন আকর্ষী বিকারক (E+) যুক্ত হয়। π-ইলেকট্রন একটি কার্বন পরমাণুতে স্থানান্তরিত হওয়ায় অপর কার্বন পরমাণুটি ধনাত্মক চার্জযুক্ত হয়। ফলে ক্ষণস্থায়ী কার্বোনিয়াম আয়ন (C+) সৃষ্টি হয় যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিকারক অনুর ঋণাত্মক (Nu-) অংশের সাথে যুক্ত হয়ে যুত যৌগ গঠন করে।


H2 সংযোজন: Pt, Pd বা Ni প্রভাবকের উপস্থিতিতে অ্যালকিনের সঙ্গে হাইড্রোজেন যুক্ত হয়ে অ্যালকেন উৎপন্ন হয়।

H2 সংযোজন কৌশল মূলত প্রভাবকীয় সংযোজন। প্রথমে Ni ধাতুর উপর H2 অধিশোষিত হয়। Ni ধাতুর পৃষ্ঠতলের পরমাণুসমূহ অধিশোষিত H পরমাণুর সাথে বন্ধন তৈরী করে। পরবর্তীতে H পরমাণুর সাথে ইথিন অন্তরবর্তী জটিল যৌগ গঠন করে সবশেষে উৎপাদ তৈরী করে।


HX সংযোজন : হাইড্রোজেন হ্যালাইডের এর সঙ্গে অ্যালকিনের যুত বিক্রিয়ায় অ্যালকাইল হ্যালাইড উৎপন্ন হয়।

HX সংযোজন কৌশল:

১ম ধাপ: অ্যালকিনের সঞ্চারণশীল π-ইলেকট্রন HX-এর প্রোটন এর সাথে বন্ধনের মাধ্যমে ক্ষনস্থায়ী কার্বোনিয়াম আয়ন ও হ্যালাইড আয়ন উৎপন্ন করে। এই ধাপটি ধীর গতির।

২য় ধাপ: প্রথম ধাপে উৎপন্ন কার্বোনিয়াম আয়ন অত্যন্ত দ্রুত গতিতে নিকটস্থ হ্যালাইড আয়নের সাথে যুক্ত হয়ে অ্যালকাইল হ্যালাইড উৎপন্ন করে।

X2 সংযোজন: সাধারণ তাপমাত্রায় হ্যালোজেন অ্যালকিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে সন্নিহিত ডাই-হ্যালাইড উৎপন্ন করে।

Br2 সংযোজন কৌশল:

HOX সংযোজন: হাইপোহ্যালাস এসিড অ্যালকিনের সাথে বিক্রিয়া করে হ্যালোহাইড্রিন উৎপন্ন করে।

HOCl সংযোজন কৌশল:

H2SO4 সংযোজন: কক্ষ তাপমাত্রায় অ্যালকিনের সাথে গাঢ় H2SO4এর বিক্রিয়ায় অ্যালকাইল হাইড্রোজেন সালফেট উৎপন্ন করে, যা আর্দ্র বিশ্লেষিত হয়ে অ্যালকোহল উৎপন্ন হয়। এ বিক্রিয়ার সাহায্যে অ্যালকিন থেকে অধিক পরিমাণে অ্যালকোহল প্রস্তুত করা যায়।

ওজোন সংযোজন বা ওজোনীকরণ: ক্লোরোফরম (CHCl3) বা কার্বন টেট্রাক্লোরাইড (CCl4) এ দ্রবীভূত অ্যালকিনের শীতল দ্রবণে ওজোন গ্যাস চালনা করলে দ্বিবন্ধনে এক অণু ওজোন যুক্ত হয়ে ওজোনাইড নামক যুত যৌগ উৎপন্ন করে। উৎপন্ন ওজোনাইড যৌগকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করা হলে অ্যালকিনের গঠন ও দ্বিবন্ধনের অবস্থান অনুযায়ী অ্যালডিহাইড বা কিটোন ও H2O2 উৎপন্ন হয়। তাই এই বিক্রিয়ার মাধ্যমে দ্বিবন্ধনের অবস্থান নির্ণয় করা যায়। উৎপন্ন H2O2 এর উপস্থিতিতে অ্যালডিহাইড পুনরায় বিজারিত হয়ে কার্বক্সিলিক এসিডে পরিণত হওয়া রোধ করার জন্য Zn গুড়া যোগ করা হয়।


জৈব যৌগের সংযোজন বিক্রিয়ার মারকনিকভ নিয়ম:

অপ্রতিসম অসম্পৃক্ত জৈব যৌগের সাথে অপ্রতিসম অসম্পৃক্ত বিকারকের সংযোজন বিক্রিয়ায় বিকারক অণুর ঋণাত্মক অংশ সাধারণত কম সংখ্যক হাইড্রোজেন পরমাণু বিশিষ্ট অসম্পৃক্ত কার্বন (π-বন্ধনযুক্ত কার্বন) পরমাণুতে যুক্ত হয়। এটি মারকনিকভ নিয়ম নামে পরিচিত।
      যেমন অপ্রতিসম অসম্পৃক্ত জৈব যৌগ প্রোপিনের (CH3-CH=CH2) সাথে অপ্রতিসম বিকারক হাইড্রোজেন হ্যালাইড ( যেমন: HBr) -এর বিক্রিয়ায় ঋণাত্মক হ্যালাইড আয়ন কম সংখ্যক হাইড্রোজেন পরমাণু বিশিষ্ট অসম্পৃক্ত কার্বনে যুক্ত হয়। তাই মারকনিকভ নিয়ম অনুসারে প্রোপিনের সাথে HBr –এর সংযোজন বিক্রিয়ায় ২-ব্রোমোপ্রোপেন প্রধান উৎপাদ পাওয়া যাবে।

উপরের উদাহরণে ২-নং অসম্পৃক্ত কার্বনে কম সংখ্যক (১-টি) হাইড্রোজেন পরমাণু আছে। তাই বিকারক অনুর ঋণাত্মক অংশ এই কার্বন (২-নং কার্বন) পরমাণুটির সাথে যুক্ত হয়ে প্রধান উৎপাদ ২-ব্রোমোপ্রোপেন উৎপন্ন করেছে।
      এর কারণ হচ্ছে বিক্রিয়াটি ইলেকট্রোফিলিক সংযোজন কৌশল অনুসারে ঘটে। ফলে এতে ১ ও ২ কার্বোনিয়াম আয়ন উৎপন্ন হয়। আর আমরা জানি ২ কার্বোনিয়াম আয়ন ১ কার্বোনিয়াম আয়নের চেয়ে অধিক সুস্থিত। তাই ২-ব্রোমোপ্রোপেন অধিক পরিমাণে উৎপন্ন হয়।

বিপরীত মারকনিক্ভ নিয়ম:

            স্বল্প পরিমাণ জৈব পারঅক্সাইড এর উপস্থিতিতে অপ্রতিসম অসম্পৃক্ত জৈব যৌগের সাথে অপ্রতিসম অসম্পৃক্ত বিকারকের সংযোজন বিক্রিয়ায় বিকারক অণুর ঋণাত্মক অংশ সাধারণত অধিক সংখ্যক হাইড্রোজেন পরমাণু বিশিষ্ট অসম্পৃক্ত কার্বন (π-বন্ধনযুক্ত কার্বন) পরমাণুতে যুক্ত হয়। একে খারাশের পার-অক্সাইড প্রভাব বা বিপরীত মারকনিকভ নিয়ম বলে।
যেমন জৈব পারঅক্সাইডের উপস্থিতিতে প্রোপিনের সাথে HBr -এর বিক্রিয়ায় 99.1% ১- ব্রোমোপ্রোপোন ও 0.9% ২- ব্রোমোপ্রোপেন উৎপন্ন হয়।

উপরের উদাহরণে ৩-নং অসম্পৃক্ত কার্বনে অধিক সংখ্যক (২-টি) হাইড্রোজেন পরমাণু আছে। তাই পারঅক্সাইড (RO-OR) -এর উপস্থিতিতে বিকারক অনুর ঋণাত্মক অংশ এই কার্বন (৩-নং কার্বন) পরমাণুটির সাথে যুক্ত হয়ে প্রধান উৎপাদ ১-ব্রোমোপ্রোপেন উৎপন্ন করেছে।

এর কারণ হচ্ছে, জৈব পার-অক্সাইডের উপস্থিতিতে প্রোপিনে HBr সংযোজন মূলত ফ্রী- রেডিকেল মেকানিজম অনুসারে ঘটে। নিম্নে পার-অক্সাইড প্রভাবের ক্রিয়া কৌশল দেখানো হল-

১ম ধাপ: এ ধাপে জৈব-পারঅক্সাইডের উপস্থিতিতে ব্রোমিন ফ্রী- রেডিকেল উৎপন্ন হয়।
২য় ধাপ: উৎপন্ন ব্রোমিন ফ্রী- রেডিকেল প্রোপিনকে আক্রমন করে অধিকতর স্থায়ী ২ ব্রোমো অ্যালকাইল ফ্রী- রেডিকেল উৎপন্ন করে।

৩য় ধাপ: এই ব্রোমো অ্যালকাইল ফ্রী- রেডিকেল HBr এর সাথে বিক্রিয়ায় বিপরীত মারকনিকভ উৎপাদ ও Br  উৎপন্ন করে যা আবার প্রোপিনের সাথে বিক্রিয়া করে।


অ্যালকিনের জারন বিক্রিয়া:

অ্যালকিন ও ক্ষারীয় শীতল লঘু KMnO4 এর জলীয় দ্রবণ এর জারণ বিক্রিয়ায় দ্বিবন্ধন এ দুটি -OH মূলক যুক্ত হয়ে গ্লাইকল উৎপন্ন করে। এ বিক্রিয়ার ফলে KMnO4 গোলাপী বর্ণ দূরীভুত হয় বলে এ বিক্রিয়া দ্বারা অ্যালকিন শনাক্তকরণ তথা  দ্বিবন্ধনের উপস্থিতি নির্ণয় তথা জৈব যৌগের অসম্পৃক্ততা নির্নয় করা যায়।

জৈব যৌগের অসম্পৃক্ততা নির্ণয়:

ব্রোমিন পানি পরীক্ষা (Br2 সংযোজন):
অ্যালকিনের সাথে ও Br2 এর সংযোজন বিক্রিয়ায় সন্নিহিত ডাই-হ্যালাইড উৎপন্ন হয়। যেমন: ইথিন (CH2=CH2) Br2 এর বিক্রিয়ায় ১,২-ডাইব্রোমো ইথেন উৎপন্ন হয়।

           অ্যালকেন এ বিক্রিয়া দেয় না। এ বিক্রিয়ায় ব্রোমিনের লাল বর্ণের জলীয় দ্রবন দূরীভুত হয় বলে এ বিক্রিয়ার সাহায্যে জৈব যৌগে দ্বিবন্ধনের উপস্থিতি  নির্ণয় করা বা অসম্পৃক্ততার পরীক্ষা করা যায়।

অ্যালকিনের জারণ:
অ্যালকিন ও লঘু ক্ষারীয় KMnO4 এর বিক্রিয়ায় সন্নিহিত ডাই-অল উৎপন্ন হয়। যেমন: যেমন: ইথিন (CH2=CH2)  ক্ষারীয় KMnO4 এর বিক্রিয়ায় ইথেন ১,২-ডাইঅল বা ইথিলিন গ্লাইকল উৎপন্ন হয়।

অ্যালকেন এ বিক্রিয়া দেয় না। এ বিক্রিয়ায় KMnO4 এর গোলাপী বর্ণ দূরীভুত হয় বলে এ বিক্রিয়ার সাহায্যে জৈব যৌগে দ্বিবন্ধনের উপস্থিতি  নির্ণয় করা বা অসম্পৃক্ততার পরীক্ষা করা যায়।

জৈব যৌগে দ্বিবন্ধনের অবস্থান নির্ণয়:

ক্লোরোফরম (CHCl3) বা কার্বন টেট্রাক্লোরাইড (CCl4) এ দ্রবীভূত অ্যালকিনের শীতল দ্রবণে ওজোন গ্যাস চালনা করলে দ্বিবন্ধনে এক অণু ওজোন যুক্ত হয়ে ওজোনাইড নামক যুত যৌগ উৎপন্ন করে। উৎপন্ন ওজোনাইড যৌগকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করা হলে অ্যালকিনের গঠন ও দ্বিবন্ধনের অবস্থান অনুযায়ী অ্যালডিহাইড বা কিটোন ও H2O2 উৎপন্ন হয়। তাই এই বিক্রিয়ার মাধ্যমে দ্বিবন্ধনের অবস্থান নির্ণয় করা যায়। উৎপন্ন H2O2 এর উপস্থিতিতে অ্যালডিহাইড পুনরায় বিজারিত হয়ে কার্বক্সিলিক এসিডে পরিণত হওয়া রোধ করার জন্য Zn গুড়া যোগ করা হয়।