Wednesday, January 20, 2016

সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন: অ্যালকেন

শিখনফল: 

  • সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন কাকে বলে বলতে পারবে।
  • অ্যালকেন কাকে বলে বলতে পারবে।
  • পরীক্ষাগারে অ্যালকেন প্রস্তুতির বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • শিল্পক্ষেত্রে অ্যালকেন প্রস্তুতির বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • অ্যালকেনের অন্যান্য প্রস্তুতির বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • অ্যালকেনের হ্যালোজিনেশন, নাইট্রেশন, তাপীয় বিয়োজন ইত্যাদি বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • অ্যালকেনের হ্যালোজিনেশন বিক্রিয়ার কৌশল লিখতে পারবে।


প্রথমেই আমরা দেখি সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন বা অ্যালকেন কী-

শুধুমাত্র কার্বন ও হাইড্রোজেন দ্বারা গঠিত যৌগের কার্বন শিকলে কেবল সিগমা (σ) বন্ধন অর্থাৎ কার্বন-কার্বন একক বন্ধন থাকলে তাদের সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন বা অ্যালকেন বলে। এদের সাধারণ সংকেত হল CnH2n+2যেমন: মিথেন (CH4), বিউটেন (CH3-CH2-CH2-CH3) ইত্যাদি। এদের কার্বন শিকল সম্পৃক্ত থাকায় এরা রাসায়নিকভাবে কম সক্রিয় তাই এদেরকে প্যারাফিন (‘parum অর্থ a little বা স্বল্প এবং affinis অর্থ affinity বা আসক্তি’) বলা হয়।

অ্যালকেনের প্রস্তুতি:

পরীক্ষাগারে-
সাধারণত কার্বোক্সিলিক এসিডের সোডিয়াম লবণের সাথে সোডালাইমের (NaOH+CaO) মিশ্রণকে তীব্রভাবে উত্তপ্ত করে অ্যলকেন প্রস্তুত করা হয়।



তাহলে পরীক্ষাগারে মিথেন ও ইথেন প্রস্তুতির বিক্রিয়া হবে-


শিল্পক্ষেত্রে-
(i)  কার্বন মনোক্সাইড ও হাইড্রোজেন এর মিশ্রণকে 3000C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত নিকেল চূর্ণের উপর দিয়ে চালনা করে মিথেন উৎপন্ন করা হয়-


(ii) কার্বন মনোক্সাইড ও স্টীমের মিশ্রণকে 2500-2700C তাপমাত্রায় নিকেল কার্বনেট প্রভাবকের ওপর দিয়ে চালনা করে মিথেনের শিল্পোৎপাদন করা হয়।



অ্যালকেন প্রস্তুতির আরও কিছু বিক্রিয়া-

ক. অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনে H2 সংযোজন



খ. উর্টজ বিক্রিয়া: শুষ্ক ইথারে দ্রবীভূত অ্যালকাইল হ্যালাইডের সাথে ধাতব সোডিয়ামের বিক্রিয়ায় অ্যালকেন উৎপন্ন হয়। এ বিক্রিয়াকে উর্টজ বিক্রিয়া বলে।



এই বিক্রিয়ার সাহায্য নিম্ন কার্বন বিশিষ্ট অ্যালকাইল হ্যালাইড থেকে উচ্চতর (মূল অ্যালকাইল হ্যালাইডের কার্বনের দ্বিগুন কার্বন বিশিষ্ট) অ্যালকেন প্রস্তুত করা যায়। যেমন ইথাইল আয়োডাইড থেকে বিউটেন প্রস্তুত করা যায়-


একক অ্যলকাইল হ্যলাইডের দুটি অণুর পরিবর্তে উর্টজ বিক্রিয়ায় যদি একাধিক অ্যালকাইল হ্যালাইডের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয় তবে উচ্চতর অ্যালকেনের মিশ্রণ পাওয়া যায়। এভাবে উর্টজ বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিজোড় সংখ্যক কার্বনের অ্যালকেন ( যেমন: প্রোপেন) প্রস্তুত করা সম্ভব হয়-




গ. অ্যালকাইল হ্যালাইডের বিজারণ: Na-C2H5OH অথবা Zn-HCl এর মিশ্রণ হতে উৎপন্ন জায়মান হাইড্রোজেন [H+] দ্বারা অ্যালকাইল হ্যালাইডকে বিজারণ করলে অ্যালকেন উৎপন্ন হয়।


ঘ. কার্বোক্সিলিক এসিডের লবণের ডিকার্বোক্সিলেশন দ্বারা: কার্বোক্সিলিক এসিডের সোডিয়াম লবণের সাথে সোডালাইমের (NaOH+CaO) মিশ্রণকে তীব্রভাবে উত্তপ্ত করলে অ্যলকেন পাওয়া যায়।


ঙ. গ্রিগনার্ড বিকারক থেকে: গ্রিগনার্ড বিকারক (অ্যালকাইল ম্যাগনেসিয়াম হ্যালাইডকে গ্রিগনার্ড বিকারক বলে) ও পানির বিক্রিয়ায় অ্যালকেন পাওয়া যায়।


চ. কোব সংশ্লেষণ: কার্বোক্সিলিক এসিডের সোডিয়াম লবণের গাঢ় জলীয় দ্রবণকে তড়িৎ বিশ্লেষণ করলে অ্যানোডে উচ্চতর অ্যালকেন উৎপন্ন হয়।


অ্যালকেনের বিক্রিয়া-

সুদৃঢ় একক সিগমা (σ) বন্ধনের কারণে অ্যালকেনকে প্যারাফিন বলা হয়। প্যারাফিন অর্থ রাসায়নিকভাবে আসক্তিহীন। তবে কিছু বিশেষ শর্তে অ্যালকেন নিম্নোক্ত বিক্রিয়া দেয়-

অ্যালকেনের হ্যালোজেনেশন-
মৃদু সূর্যালোক বা অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিতিতে বা উচ্চ তাপমাত্রায় অ্যালকেনের হাইড্রোজেন পরমানু হ্যালোজেন (Cl2, Br2) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। যেমন, সূর্যালোকের উপস্থিতিতে CH4 Cl2 এর বিক্রিয়ায় মিথেনের চারটি H পরমাণু একে একে Cl পরমাণু দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যথাক্রমে মিথাইল ক্লোরাইড (CH3Cl), মিথিলিন ক্লোরাইড (CH2Cl2), ক্লোরোফরম (CHCl3), ও কার্বন টেট্রাক্লোরাইড (CCl4) উৎপন্ন হয়।


(I2 হ্যালোজেন প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া দেয় না। 30>20>10 H পরমাণুতে প্রতিস্থাপন ঘটে)

হ্যালোজিনেশন বা ক্লোরিনেশেনের বিক্রিয়া কৌশল-

অ্যালকেনের হ্যালোজিনেশন বিক্রিয়া মৃদু সূর্যালোক, তাপ অথবা অতিবেগুণী রশ্মির (396Kjmol-1) প্রভাবে মুক্ত মূলক বিক্রিয়া কৌশল অর্থাৎ ফ্রী-রেডিক্যাল মেকানিজম অনুসারে ৩ ধাপে ঘটে-

সূচনা স্তর (১ম ধাপ): এ স্তরে আলো বা তাপশক্তির প্রভাবে ক্লোরিন (Cl2) অণুর সুষম ভাঙনে ক্লোরিন ফ্রি-রেডিক্যাল (.Cl) উৎপন্ন হয়।



বিস্তারণ স্তর (২য় ধাপ): উৎপন্ন ক্লোরিন ফ্রি-রেডিক্যাল অ্যালকেনের C-H বন্ধনকে আক্রমন করে HCl ও অ্যালকাইল (.R) ফ্রি-রেডিক্যাল উৎপন্ন করে। এ সক্রিয় অ্যালকাইল (.R) ফ্রি-রেডিক্যাল অপর একটি ক্লোরিন (Cl2) অণুর সঙ্গে বিক্রিয়ায় অ্যালকাইল ক্লোরাইড (RCl) ও নতুন ক্লোরিন ফ্রি-রেডিক্যাল (.Cl) উৎপন্ন করে। এ ধাপ বিক্রিয়ার পুনারাবৃত্তি ঘটতে থাকে। তাই এ ধরণের বিক্রিয়াকে চেইন বিক্রিয়া বলে।



সমাপ্তি স্তর (৩য় ধাপ): বিভিন্ন ফ্রি-রেডিক্যাল যুক্ত হয়ে বিক্রিয়া শেষ হয়।



ফ্রী-রেডিক্যালের স্থায়ীত্ব ও বিক্রিয়ার ক্রম-

ফ্রী-রেডিক্যালের স্থায়ীত্বের ক্রম 30>20>10  -এর কারণ-

সমযোজী সিগমা বন্ধনের সুষম ভাঙনের ফলে উৎপন্ন বিজোড় ইলেকট্রনযুক্ত পরমাণু বা মূলককে মুক্ত মূলক বা ফ্রি-রেডিক্যাল বলে। যেমন: মিথাইল ফ্রি-রেডিক্যাল CH3 , ক্লোরিন ফ্রি-রেডিক্যাল Cl ইত্যাদি। উৎপন্ন ফ্রী-রেডিক্যালে ইলেকট্রনের ঘাটতি থাকে।

ইলেকট্রনের ঘাটতিযুক্ত অ্যালকাইল ফ্রী-রেডিক্যালের কার্বন পরমাণুতে যদি ইলেকট্রন বিকর্ষী মূলক যেমন মিথাইল (CH3-), ইথাইল (C2H5-) ইত্যাদি যুক্ত থাকে তবে সেটি ইলেকট্রনের ঘাটতিযুক্ত অ্যালকাইল ফ্রী-রেডিক্যালের কার্বন এর চারপাশে ইলেকট্রন এর ঘনত্ব বৃদ্ধি করে তাই ফ্রী-রেডিক্যালের এর কার্বন পরমাণুতে যত বেশি সংখ্যক অ্যালকাইল মূলক যুক্ত থাকে সেটি তত বেশী স্থায়ী হয় তাই ফ্রী-রেডিক্যালের স্থায়ীত্বের ক্রম 30>20>10
আর যে ফ্রী-রেডিক্যাল যত বেশী স্থায়ী সেটি তত বেশী সক্রিয় অর্থাৎ সেটি বেশী উৎপন্ন হবে। আর যেহেতু ফ্রী-রেডিক্যালের স্থায়ীত্বের ক্রম 30>20>10 এবং আমরা জানি, অ্যলকেনের হাইড্রোজেন পরমাণুর প্রতিস্থাপন মূলত ফ্রী-রেডিক্যাল মেকানিজম অনুসারে ঘটে থাকে তাই হাইড্রোজেন পরমাণুর প্রতিস্থাপনও এই ক্রমে 30>20>10 কার্বনে ঘটবে।

ব্যাখ্যা কর-প্রোপেনের ব্রোমিনেশনে ৯৭% ২-ব্রোমোপ্রোপেন আর ৩% ব্রোমোপ্রোপেন উৎপন্ন হয়।


অ্যালকেনের নাইট্রেশন বিক্রিয়া-
প্রায় 4000C তাপমাত্রায় অ্যালকেন ও গাঢ় HNO3 এর বাষ্পকে একত্রে উত্তপ্ত করলে অ্যালকেনের হাইড্রোজেন (H) পরমাণু নাইট্রো (NO2) মূলকদ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে নাইট্রো অ্যালকেন প্রস্তুত হয়।



অ্যালকেনের তাপীয় বিযোজন: উচ্চ চাপে ও তাপমাত্রায় তাপীয় ভাঙনে অথবা প্রভাবকের উপস্থিতিতে অপেক্ষাকৃত নিম্নতাপমাত্রায় প্রভাকীয় ভাঙনে বৃহত্তর অ্যালকেন ভেঙে ক্ষুদ্রতর অ্যালকেন ও অ্যালকিনের মিশ্রণ উৎপন্ন হয়। বিযোজনের ফলে সৃষ্ট অণুর প্রকৃতি নির্ভর করে অ্যালকেন অনুর আকৃতি, তাপ, চাপ, প্রভাবক ইত্যাদির উপর। এ বিক্রিয়ার সাহায্যে বৃহত্তর অ্যালকেন থেকে ক্ষুদ্রতর অ্যালকেন প্রস্তুত করা যায়-


অ্যালকেনের সমাণুকরণ বিক্রিয়া:
অনার্দ্র AlCl3 HCl গ্যাসের মিশ্রণের উপস্থিতিতে 2500-3000c তাপমাত্রায় n-অ্যালকেনের সমাণুকরণ বিক্রিয়ায় শাখাযুক্ত iso-অ্যালকেন উৎপন্ন হয়-



এভাবে একইভাবে কম শাখাযুক্ত অ্যালকেন থেকে বেশি শাখাযুক্ত অ্যালকেন প্রস্তুত করা যায়।



অকটেন নাম্বার
কোন পেট্রোল ইঞ্জিনে জ্বালানিরূপে গ্যাসোলিন ব্যবহারের ফলে ইঞ্জিনে যে পরিমাণ ধাক্কা বা নকিং সৃষ্টি করে, সে একই পরিমাণ নকিং সেই ইঞ্জিনে সৃষ্টি করতে ব্যবহৃত iso-অকটেন ও n-হেপ্টেনের কোন মিশ্রণে যে শতকরা পরিমাণ iso-অকটেনের দরকার হয়, iso-অকটেনের সেই শতকরা পরিমাণ কে ঐ গ্যাসোলিন জ্বালানির অকটেন নাম্বার বলে।
            কোন মোটর জ্বালানির অকটেন নাম্বার 85 বলতে বোঝায় ঐ জ্বালানিটি 15% n-হেপ্টেন 85% iso-অকটেন মিশ্রণের সমান জ্বালানি ক্ষমতাসম্পন্ন তৈল। যে জ্বালানির অকটেন নাম্বার যত বেশি সে জ্বালানি তত বেশী উৎকৃষ্ট।

জ্বালানির অকটেন নাম্বার বৃদ্ধির উপায়-

১। উচ্চতর অ্যলকেনের তাপীয় বিযোজনের মাধ্যমে:



২। অ্যালকেনের সমাণুকরণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে:











Saturday, January 16, 2016

জৈব যৌগের সমাণুতা-(শেষ পর্ব)

শিখনফল: যৌগের সংকেত (আণবিক অথবা গাঠনিক) থেকে  সম্ভাব্য সমাণুগুলি নির্ণয় করতে পারবে।







আগের পর্বে আমরা যৌগের সমাণুতার প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনেছি।

এই পর্বে আমরা শিখব কিভাবে যৌগের সংকেত থেকে সমাণু নির্ণয় করতে হয়।

সাধারণত যৌগের আনবিক সংকেতের সমাণু নির্ণয় করতে বলা হলে গাঠনিক সমাণু নির্ণয়ের চেষ্টা করতে হয় এবং গাঠনিক সংকেতের সমাণু নির্ণয় করতে বলা  হলে স্টেরিও সমাণু নির্ণয়ের চেষ্টা করতে হয়। তবে সম্ভাব্য সকল সমাণু নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সবরকম সমাণুর গঠন সম্ভব কিনা চেষ্টা করে দেখতে হবে।

গাঠনিক সমাণু নির্ণয়ের ক্ষেত্রে নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে-

  • প্রথমেই প্রদত্ত যৌগের সংকেত থেকে যৌগটির সমগোত্রীয় শ্রেণী নির্ধারণ করতে হবে। একটি যৌগ শুধুমাত্র তার সমগোত্রীয় শ্রেণীর সমাণু গঠন করবে। নিচে যৌগের সাধারণ সংকেত ও তার সমগোত্রীয় শ্রেণী দেখানো হল-

আনবিক সংকেত
সমগোত্রীয় শ্রেণী
CnH2n+2
অ্যালকেন
CnH2n
অ্যালকিন, সাইক্লো অ্যালকেন
CnH2n-2
অ্যালকাইন, সাইক্লো অ্যালকিন, ডাই-ইন
CnH2n+2O
অ্যালকোহল, ইথার
CnH2n+1OH
অ্যালকোহল
CnH2nO
কার্বনাইল (অ্যালডিহাইড, কিটোন)
CnH2nO2
কার্বোক্সিলিক এসিড, এস্টার
CnH2n+3N
সম্পৃক্ত অ্যালিফেটিক অ্যামিন

  • কার্বন সংখ্যা অনুযায়ী সবচেয়ে দীর্ঘ শিকল তৈরী করতে হবে।
  • কার্বনের সংখ্যা কমিয়ে বিভিন্ন শাখা শিকল তৈরী করতে হবে। মূল শিকলে যতগুলি কার্বন সংখ্যা কমানো হবে শাখা শিকলে ঠিক ততগুলো কার্বন যুক্ত করতে হবে।
  • শিকলের সম্ভাব্য সকল স্থানে কার্যকরী মূলক বসাতে হবে।


সম্ভাব্য সকল গাঠনিক সমানু পাওয়ার পর স্টেরিও সমাণু হয় কিনা দেখতে হবে।

স্টেরিও সমাণু:

দ্বিবন্ধন যুক্ত যৌগ অথবা চাক্রিক যৌগ জ্যামিতিক সমাণুতা প্রদর্শণ করে। (অর্থাৎ যদি যৌগটি দ্বিবন্ধনযুক্ত যৌগ অথবা চাক্রিক যৌগ হয় তাহলে সেটি সিস-ট্রান্স সমাণু গঠণ করে কিনা দেখতে হবে)

কাইরাল কার্বন যুক্ত যৌগ আলোক সমাণুতা প্রদর্শণ করে। (অর্থাৎ যদি যৌগটিতে একটি কাইরাল কার্বন থাকে তবে ঐ কার্বন পরমাণুর স্বাপেক্ষে পরস্পর অসমপাতিত দর্পণ প্রতিবিম্ব তৈরী করতে হবে)

এইবার এই নিয়ম গুলো অনুসরণ করে আমরা  C4H8 এর সম্ভাব্য সকল সমাণু নির্ণয় করি-

১. যৌগের সংকেত থেকে সমগোত্রীয় শ্রেণী নির্ণয়-

C4H8 অর্থাৎ CnH2n  সাধারণ সংকেত বিশিষ্ট যৌগের সমগোত্রীয় শ্রেণী হল অ্যালকিন এবং সাইক্লো অ্যালকেন (অর্থাৎ যৌগটির শুধুমাত্র অ্যালকিন ও সাইক্লো অ্যালকেন সমাণু থাকবে)।

২. যেহেতু এই যৌগে ৪টি কার্বন পরমাণু তাই সবচেয়ে দীর্ঘ শিকলটি হবে ৪ কার্বন এর। আবার যেহেতু এটি অ্যালকিন সমগোত্রীয় শ্রেনীর যৌগ তাই দীর্ঘ শিকলে অবশ্যই একটি দ্বিবন্ধন থাকবে। তাহলে আমরা ৪ কার্বনের যে সমাণুগুলি সাজাতে পারছি তা হল-

(i) 

(ii)

(iii) 



(লক্ষ্য কর, আপাতদৃষ্টিতে (i) ও (iii) গাঠনিকভাবে ভিন্ন মনে হলেও জৈব যৌগের নামকরণের নিয়ম থেকে আমরা জানি এই দুটি আসলে একই গঠন এবং একই যৌগ। তাই (i) ও (iii) আসলে একই সমাণু। এদের দুইটি আলাদা সমাণু হিসেবে লেখা যাবে না।)

৩. ৪ কার্বনের পর দীর্ঘ শিকলে কার্বনের সংখ্যা কমিয়ে অনুরূপভাবে শিকল কাঠামো তৈরী করতে হবে। এক্ষেত্রে ৩ কার্বনের শুধুমাত্র নিম্নোক্ত গঠনের একটিমাত্র যৌগ তৈরী করা সম্ভব হয়।

(আপাত দৃষ্টিতে ভিন্ন কিন্তু একই গঠনের এবং একই নামের এই একটি যৌগই সম্ভব)


যেহেতু এই যৌগটি দিয়ে ২ কার্বনের আর কোন শিকল গঠন সম্ভব হয় না তাই আমরা পরবর্তী সমগোত্রক অর্থাৎ সাইক্লো অ্যালকেন সমাণু সাজানোর চেষ্টা করি-
৪.(ক) প্রতিটি কার্বন (৪টি) দিয়ে চক্রিয় কাঠামোর অ্যালকেন-


৪.(খ) কার্বনের সংখ্যা কমিয়ে চক্রিয় কাঠামোর অ্যালকেন-

(আপাত দৃষ্টিতে ভিন্ন কিন্তু একই গঠনের এবং একই নামের এই একটি যৌগই সম্ভব)

এভাবে সবগুলি গাঠনিক সমাণু নির্ণয় করার পর আমরা দেখব এই যৌগটির স্টেরিও সমাণু সম্ভব কিনা-

আমরা জানি দ্বিবন্ধন ও চক্রীয় যৌগ জ্যামিতিক সমাণু প্রদর্শন করে।

এর মধ্যে বিউট-২-ইন সমাণু গঠনটি সিস-ট্রান্স জ্যামিতিক সমাণুতা প্রদর্শণ করে- 


যেহেতু এই যৌগে কোন কাইরাল কার্বন নেই তাই এটি আলোক সমাণুতা প্রদর্শন করবে না।

তাহলে C4H8 এর সম্ভাব্য সকল সমাণুগুলি হচ্ছে

গাঠনিক সমাণু:


স্টেরিও সমাণু:



এইবার আমরা জৈব যৌগের সমাণুতা-১ পর্বে বিভিন্ন প্রকারের সমাণু শেখার সেময় যে কাজগুলি ছিল সেগুলি মিলিয়ে দেখি-

C5H12-এর শিকল সমাণু নির্ণয় করার চেষ্টা কর-

(C5H12  অ্যালকেন সমগোত্রক। মূল শিকলে কার্বনের সংখ্যা কমিয়ে সম্ভাব্য সমাণু নির্ণয় করতে হবে)



C4H8- এর অবস্থান সমাণু নির্ণয় করার চেষ্টা কর-

( C4H8 অ্যলকিন সমগোত্রক, তাই দ্বিবন্ধনের অবস্থান দিয়ে সমাণুতা নির্ণয় করতে হবে)

C2H6O-এর কার্যকরী মূলক সমাণুতা নির্ণয় করার চেষ্টা কর-

(C2H6O এর সমগোত্রক অ্যালকোহল ও ইথার তাই এই দুটি কার্যকরী মূলকযুক্ত সমাণু নির্ণয় করতে হবে)

C4H10O –এর মেটামার নির্ণয় করার চেষ্টা কর-


(C4H10O এর সমগোত্রক অ্যালকোহল ও ইথার। আমরা জানি, ইথার, কিটোন ও সেকেন্ডারি অ্যামিনসমূহ মেটামারিজম প্রদর্শন করে। তাই ইথার মূলকের দুই পাশে ভিন্ন সংখ্যক কার্বন পরমাণু লিখে মেটামার সমাণু নির্ণয় করতে হবে)

CH3-CH(NH2)-COOH -এর আলোক সমাণু নির্ণয়-



(যৌগের দ্বিতীয় কার্বন পরমাণু টি কাইরাল কার্বন। এটির স্বাপেক্ষে দুটি একে অপরের অউপরিস্থাপণীয় দর্পন প্রতিবিম্ব অর্থাৎ আলোক সমাণু গঠিত হয়)

আশা করি, এই নিয়ম গুলো অনুসরণ করে এবং বেশী বেশী অনুশীলন করে আমরা জৈব যৌগের সমাণু নির্ণয় করতে পারবো।


নিম্নলিখিত যৌগসমূহের সমাণুতা নির্ণয় কর-

(i) C5H10O2
(ii) C6H5-CH-CH(NH2)-COOH