শিখনফল: যৌগের আনবিক
সংকেত থেকে সম্ভাব্য সমাণুগুলির গাঠনিক সংকেত লিখতে পারবে।
জৈব
যৌগের সমাণুতা:
যেসব যৌগের আনবিক
সংকেত এক হওয়া সত্ত্বেও এদের গাঠনিক সংকেতের ভিন্নতার কারণে এবং অণুস্থিত
পরমাণুসমূহের ত্রিমাত্রিক বিন্যাসের ভিন্নতার কারণে এদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের
পার্থক্য দেখা যায় সেসব যৌগকে পরস্পরের সমাণু এবং যৌগের এরূপ ধর্মকে সমাণুতা বলে।
সমাণুতার
প্রকারভেদ:
সমাণুতাকে প্রধানত দু শ্রেণীতে ভাগ
করা যায়-
ক.
গাঠনিক সমাণুতা।
এবং
খ.
ত্রিমাত্রিক বা স্টেরিও সমাণুতা।
ক. গাঠনিক সমাণুতা:
যৌগের অণুস্থিত বিভিন্ন
পরমাণুর সম্ভাব্য একাধিক অবস্থান তথা ভিন্ন ভিন্ন গাঠনিক সংকেতের পার্থক্যের জন্য
যে সমাণুতার উদ্ভব হয় তাকে গাঠনিক সমাণুতা বলে।
গাঠনিক সমাণু পাঁচ প্রকার। যেমন-
১। শিকল সমাণুতা:
যৌগের অণুস্থিত কার্বন শিকলের গঠনের পার্থক্যের জন্য সৃষ্ট সমাণুতাকে শিকল সমাণুতা
বলে। যেমন- C4H10।
(সমাণু দুটিতে যথাক্রমে ৪ টি ও ৩টি
কার্বন পরমাণুর প্রধান শিকল)
C5H12-এর শিকল সমাণু নির্ণয় করার চেষ্টা কর।
২। অবস্থান সমাণুতা: কার্বন শিকলে
দ্বিবন্ধন ও ত্রিবন্ধনের অবস্থান অথবা কার্যকরী মূলক বা প্রতিস্থাপিত পরমাণু বা
মূলকের অবস্থানের পার্থক্যের জন্য সৃষ্ট সমাণুতাকে অবস্থান সমাণুতা বলে। যেমন- C3H8O।
C4H8-
এর অবস্থান সমাণু নির্ণয় করার চেষ্টা
কর।
৩। কার্যকরী মূলক সমাণুতা: কার্যকরী
মূলকের বিভিন্নতার কারনে সৃষ্ট সমাণুতাকে কার্যকরী মূলক সমাণুতা বলে। যেমন-C3H6O।
C2H6O-এর কার্যকরী মূলক সমাণুতা নির্ণয় করার
চেষ্টা কর।
৪। মেটামারিজম: একই সমগোত্রীয় শেণীর
অন্তর্ভুক্ত সমাণুগুলোতে কার্যকরী মূলকের উভয় পার্শ্বে কার্বন পরমানুর সংখ্যার
ভিন্নতার কারনে সৃষ্ট সমাণুতাকে মেটামারিজম বলে। এবং এসব সমাণুকে মেটামার বলে।
যেমন- C5H10O।
(একই সমগোত্রীয় (কিটোন) শ্রেণীর যৌগ,
কিন্তু দুটি সমাণুতে কার্যকরী মূলকের (-CO-) দুপাশে কার্বনের সংখ্যা ভিন্ন। তাই এরা
মেটামার। উপরের আলোচনা থেকে লক্ষ্য করে দেখ, এরা কিন্তু একই সাথে অবস্থান সমাণুক। সাধারণত ইথার,কিটোন,ও সেকেন্ডারী অ্যামিনসমূহ মেটমরিজম প্রদর্শন করে। )
C4H10O –এর মেটামার নির্ণয় করার চেষ্টা কর।
৫। টটোমারিজম: টটোমারিজম হল একটি
বিশেষ ধরনের কার্যকরী মূলক সমাণুতা। এ প্রক্রিয়ায় সমাণুগুলো এক প্রকার কার্যকরী
মূলক বিশিষ্ট গঠন থেকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে অন্য প্রকার কার্যকরী মূলক বিশিষ্ট গঠনে
রূপান্তরিত হয় এবং উভয় গঠনের মধ্যে সাম্যাবস্থা বিরাজমান থাকে। তাই টটোমারিজম কে
গতিশীল কার্যকরী মূলক সমাণুতা বলে। এরূপ সমাণুর একটি কে অপরটির টটোমার বলে। যেমন: কিটো-ইনল
টটোমারিজম।
খ. স্টেরিও সমাণুতা:
যে
সব যৌগের আণবিক ও গাঠনিক সংকেত একই কিন্তু বিভিন্ন পরমাণু ও মূলকের ত্রিমাত্রিক
অবস্থান বিন্যাসের কারনে এদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মে পার্থক্য দেখা যায় সে সব যৌগকে
স্টেরিও সমাণু এবং এদের এই ধর্মকে স্টেরিও বা ত্রিমাত্রিক সমাণুতা বলে।
স্টেরিও
সমাণুতা দু’ প্রকার। যেমন-
১। জ্যামিতিক সমাণুতা
২। আলোক সমাণুতা
১। জ্যামিতিক সমাণুতা: জৈব যৌগের
কার্বন-কার্বন বন্ধনের অক্ষ বরাবর মুক্ত আবর্তন সম্ভব না হলে তখন ভিন্ন কনফিগারেশন
বা জ্যামিতিক বিন্যাসযুক্ত দু’ধরনের
যৌগ অণু সৃষ্টি হয়। এদেরকে জ্যামিতিক সমাণু এবং এ ধরণের সমাণুতাকে জ্যামিতিক
সমাণুতা বলে। সাধারণত প্রতিস্থাপিত অ্যালকিনসমূহ এবং চাক্রিক যৌগসমূহ জ্যামিতিক
সমাণুতা প্রদর্শন করে।
জ্যামিতিক
সমাণুতে দ্বিবন্ধনের দুপাশে একই পরমাণু বা মূলকদ্বয় যখন দ্বিবন্ধনযুক্ত কার্বন
পরমাণুর একই পার্শ্বে থাকে তখন তাকে সিস (cis) সমাণু আর বিপরীত পার্শ্বে থাকলে তখন তাকে ট্রান্স (trans) সমাণু বলে। যেমন-
(দ্বিবন্ধনের দুপাশে একই পরমাণু Br
ও H। এখানে Br বা H দ্বিবন্ধনের একদিকে যেদিকে আছে (Br নীচে এবং H উপরে) দ্বিবন্ধনের অন্যদিকেও সেদিকে আছে।
তাই এটি সিস সমাণু)
(দ্বিবন্ধনের দুপাশে একই পরমাণু Br
ও H। এখানে Br বা H দ্বিবন্ধনে একদিকে যে দিকে আছে অন্যদিকে
তার বিপরীত দিকে আছে। তাই এটি ট্রান্স সমাণু)
২-বিউটিন -এর সিস-ট্রান্স সমাণু দুটি
লেখার চেষ্টা কর।
২। আলোক সমাণুতা: একই আনবিক ও গাঠনিক
সংকেত বিশিষ্ট যৌগের দুই বা ততোধিক ভিন্ন কনফিগারেশন যখন একবর্ণী এক-সমতলীয় আলোর
প্রতি ভিন্ন আচরন প্রদর্শন করে তখন তাদের আলোক সক্রিয় সমাণু এবং একবর্ণী এক-সমতলীয়
আলোর প্রতি তাদের এই আচরণকে আলোক সমাণুতা বলে।
আলোক
সমাণুগুলোর অপ্রতিসম কার্বন পরমাণু বা কাইরাল কেন্দ্র থাকে, এরা একে অপরের দর্পণ
প্রতিবিম্ব হয় এবং কনফিগারেশন গুলো পরস্পর অসমপাতিত হয়। যেমন- ল্যাকটিক এসিডের (CH3.CH.(OH).COOH) দুটি আলোক সমাণু আছে। একটি d-ল্যাকটিক এসিড ( যেসব আলোক সমাণু এক-সমতলীয় আলোর
তলকে ডানদিকে ঘুরায় তাদের দক্ষিনাবর্ত বা (+) বা d (dextro-rotatory) যৌগ বলে) এবং অপরটি l-ল্যাকটিক এসিড (যেসব আলোক সমাণু এক-সমতলীয় আলোর
তলকে বামদিকে ঘুরায় তাদের বামাবর্ত বা (-)
বা l (laevo-rotatory)
যৌগ বলে)।
(একটি অপরটির দর্পন প্রতিবিম্ব)
CH3-CH(NH2)-COOH -এর আলোক সমাণুগুলি লেখার চেষ্টা কর।
কাইরাল কার্বন:
একই
কার্বন পরমাণুতে চারটি ভিন্ন মূলক যুক্ত থাকলে ঐ কার্বন পরমাণুর সাপেক্ষে যৌগটি
অপ্রতিসম হয় তাই ঐ যৌগকে অপ্রতিসম বা কাইরাল যৌগ এবং ঐ কার্বন কে কাইরাল কার্বন (chiral) বলে। যৌগের সংকেতে একে তারকা
(*) চিহ্ন দ্বারা দেখানো হয়। (একটি যৌগে যদি nটি কার্বন পরমাণু থাকে তবে তার 2n সংখ্যক আলোক সমাণু থাকবে।)
এনানসিওমারিজম:
অপ্রতিসম
কার্বন পরমাণু যুক্ত কোন যৌগ অনু ও এর দর্পন প্রতিবিম্ব পরস্পর সমাপতিত না হলে
এরূপ দুই ভিন্ন গঠনের অণু আলোক সক্রিয় হয়। এরূপ দুই আলোক সক্রিয় সমাণুকে
এনানসিওমার বলা হয়।
রেসিমিক মিশ্রণ:
দুটি এনানসিওমার
যেমন d-ল্যাকটিক এসিড ও l-ল্যাকটিক এসিড উভয়েই এক-সমতলীয় আলোর তলকে সমান
কৌণিক পরিমাণে বিপরীত দিকে ঘুরায়। তাই d-সামাণু ও l-সমাণুর সমপরিমান মিশ্রণ পরস্পরের বিপরীত ঘূর্ণন
ক্রিয়াকে নষ্ট করে অর্থাৎ দুটি বিপরীত আলোক সক্রিয় মিশ্রণ আলোক নিষ্ক্রিয় হয়। দুটি
এনানসিওমারের সমমোলার মিশ্রণকে রেসিমিক মিশ্রণ বা dl মিশ্রণ বা (+/-) মিশ্রণ বলে।
জৈব যৌগের সমাণুতা-(শেষ পর্ব)
জৈব যৌগের সমাণুতা-(শেষ পর্ব)
So helpfull
ReplyDeleteThanks u so much.
ReplyDeleteHelp me a lot..
it helps me a lot
ReplyDeletethanks
ReplyDelete